স্পেনসহ পুরো আইবেরিয়ান উপদ্বীপ সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে হঠাৎ করেই একযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুহূর্তেই থমকে যায় স্পেনের স্বাভাবিক জীবযাত্রা। পর্তুগালও পড়ে বড় ধরনের সংকটে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
স্পেনের বিদ্যুৎ সংস্থা রেড ইলেকট্রিকা জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ২৪ ঘণ্টা পর প্রায় ৯৯ দশমিক ১৬ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হয়েছে। তবে এই বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে। অন্যদিকে, পর্তুগালের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অন্তত এক সপ্তাহ। যদিও সরকার জানিয়েছে, আজ (২৯ এপ্রিল) দিনের মধ্যে পুরো দেশেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্পেনে শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলা। বন্ধ হয়ে যায় ইলেকট্রিক মেট্রো ও ট্রেন চলাচল। অনেক যাত্রী টানেলের ভেতর আটকা পড়ে যান। পরে উদ্ধারকারী দল অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে একাধিক জায়গায়।
বিমান চলাচলেও বিপর্যয় নেমে আসে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্পেনে বাতিল করা হয় ৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট। এ ছাড়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। একপ্রকার তথ্য অন্ধকারে ডুবে যায় মানুষ। তখন ভরসা হয়ে ওঠে রেডিও। জানা গেছে, সোমবার স্পেনজুড়ে রেডিও বিক্রিতে রেকর্ড হয়েছে।
অচলাবস্থার কারণে দেশজুড়ে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রায় ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে স্পেন সরকার।
এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। অনেকে শুরুতে ধারণা করেছিলেন, এটি কোনো সাইবার আক্রমণের ফল। তবে স্পেন ও পর্তুগাল উভয় দেশ জানিয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইউরোপীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ইউরেলেকট্রিকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যকার একটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের ত্রুটি থেকেই মূলত এই বিপর্যয়ের সূত্রপাত।
এই ঐতিহাসিক বিপর্যয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ভেঙে পড়লে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।